পৃথিবীর বুকে যত বিপর্যয় নেমে আসে, তার জন্য মানুষের সীমালঙ্ঘনই দায়ী। প্রকৃতিতে মানুষের অন্যায় হস্তক্ষেপ ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়, তেমনি নৈতিক অধঃপতন ও গুনাহের কারণে সমাজের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট হয়। ভালো কাজের সুফল যেভাবে আমরা ভোগ করি, একইভাবে মন্দ কাজের ফলে আমাদের ভুগতে হয় নানা দুর্ভোগ। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় কিংবা বৈশ্বিক পর্যায়ের ক্ষেত্রেও এটি সত্য।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ সব বিপর্যয়ের জন্য মানুষের কৃতকর্মকেই দায়ী করেছেন—সেটা হোক জাগতিক অন্যায়-অনাচার কিংবা গুনাহ-পাপাচার। আল্লাহ মানুষকে সব সময় পাকড়াও করেন না। তাকে শোধরানোর সুযোগ দেন। তবে তারা যখন সীমালঙ্ঘন করে, তখনই তিনি পাকড়াও করেন। এরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ আপতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৩০)
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি যেমন দুহাত ভরে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতি উপহার দিচ্ছে, তেমনি একইভাবে তার ক্ষতিকর দিকগুলোও প্রকৃতি, পরিবেশ ও সমাজকে আক্রান্ত করছে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ও দূষণের কারণে পৃথিবীর আবহাওয়া যেমন নষ্ট হচ্ছে, প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অপরাধ-পাপাচারও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। ফলে আমরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অসন্তুষ্টির অংশীদার হচ্ছি।
সমাজের মানুষ যখন বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে এবং গুনাহের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করে বসে, তখন আল্লাহ তাদের জন্য শাস্তি হিসেবে দুর্যোগ ও বালা-মুসিবত চাপিয়ে দেন। যেমন, পৃথিবীতে মহামারি ও রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব, জনগণের ঘাড়ে অত্যাচারী শাসক চেপে বসা, পণ্য দ্রবের মূল্যবৃদ্ধি, খরা-দুর্ভিক্ষ, অতিবৃষ্টি-বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি বিপদ-আপদে পতিত হয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (স.) এমন পাঁচটি পাপকর্মের বিষয়ে সতর্ক করেছেন, যখন কোনো সম্প্রদায় সেগুলোতে লিপ্ত হয়ে পড়বে, তখন পাঁচ ধরনের বালা-মুসিবত তাদের গ্রাস করবে। হাদিসের সারমর্ম হলো:
এক. অশ্লীলতার ব্যাপক প্রসারের ফলে এমন মহামারি ছড়িয়ে পড়বে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।
দুই. মাপ ও ওজনে কম দেওয়ার ফলে দুর্ভিক্ষ, কঠিন খাদ্য-সংকট এবং শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হতে হবে।
তিন. সম্পদের জাকাত না দেওয়ার ফলে অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেবে।
চার. আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য না করার ফলে শত্রুদের শাসক বানানো হবে এবং তারা ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করবে।
পাঁচ. পবিত্র কোরআনের বিধান ও রাসুলের নির্দেশনা মতে সমাজব্যবস্থা পরিচালনা না করলে তাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)
বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের অন্যায় কাজ, অপরাধ ও গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। কৃত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রকৃতির প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ করতে হবে। নৈতিকতার মানদণ্ডে সবাইকে উত্তীর্ণ হতে হবে। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) বলেছেন, ‘যেকোনো বালা-মসিবত মানুষের অপরাধ ও গুনাহের কারণেই আপতিত হয়, আর যেকোনো মসিবত তওবার মাধ্যমেই দূরীভূত হয়।’ তাই বিপর্যয় থেকে মুক্তি পেতে আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত ও লজ্জিত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তওবা করতে হবে।
Comments
Post a Comment